বিশ্বজুড়ে ফুটবল প্রশিক্ষণে বিপ্লব ঘটানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নতুন একটি প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ঘোষণা করেছে। আগামী মাস থেকে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা মাঠে আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ড্রিবলিং, পাসিং বা ট্যাকলিংয়ের অনুশীলন করবে না। এর পরিবর্তে তারা হেঁটে ঢাকার রাস্তায় রিকশা, সিএনজি, বাস এবং মাঝে মাঝে ছুটে আসা গরুকে এড়িয়ে দক্ষতা উন্নত করবে।

“ঢাকার ট্রাফিক ইতোমধ্যেই ধৈর্য, সিদ্ধান্ত এবং সৃজনশীল চিন্তার এক চূড়ান্ত পরীক্ষা হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। যদি আমাদের খেলোয়াড়রা এটি পার করতে পারে, তবে তারা অবশ্যই যে কোনও ফুটবল ম্যাচে দক্ষতা দেখাতে পারবে,” গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বাফুফের এক কর্মকর্তা ব্যাখ্যা করেন।

এই ধারণাটি সহজ কিন্তু সাহসী: খেলোয়াড়রা ফার্মগেট থেকে হাঁটতে শুরু করবে এবং রাশ আওয়ারে মতিঝিলে পৌঁছাতে হবে – তাও কোনও ধাক্কা না খেয়ে, আটকে না থেকে বা ঢাকার খ্যাতিমান খোলা ম্যানহোলে জুতো না হারিয়ে। “এটা একেবারে হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ পরিস্থিতির মতোই,” কর্মকর্তা আরও যোগ করেন। “তারা ট্রাফিক এড়িয়ে চলবে এবং বিভিন্ন দিক থেকে আসা বিশৃঙ্খল চলাচল অনুমান করবে।”

প্রখ্যাত ফুটবল কোচ আবুল হাসান এই উদ্যোগকে “কৌশলগত ফুটবলের পরবর্তী স্তর” বলে প্রশংসা করেছেন। হাসানের মতে, ঢাকার রাস্তাগুলি ইউরোপের সবচেয়ে কঠিন লিগগুলির চেয়েও বেশি চ্যালেঞ্জিং। “যদি আপনি সিএনজি ড্রাইভারের আচমকা বাঁকানো এবং উল্টোদিক থেকে আসা বাসের মাঝখানে বেঁচে যেতে পারেন, তাহলে প্রতিপক্ষের সাধারণ ট্যাকল আপনার কাছে কিছুই না,” তিনি আত্মবিশ্বাসের সাথে বললেন।

শুধু এলিফ্যান্ট রোড সফলভাবে পাড়ি দিয়ে কোনও খেলোয়াড় কখনও বিশ্বকাপ জেতেনি

জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় এই নতুন প্রশিক্ষণ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। “আমরা মাঠে স্ট্যামিনা অনুশীলন করতাম, কিন্তু ঢাকার ট্রাফিকের মধ্যে তেজগাঁও থেকে গুলিস্তান দৌড়ানো আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল,” এক খেলোয়াড় বলেন। “তবে আমার দৌড়ানোর গতি অবশ্যই বেড়েছে। যদি আপনি মিরপুর রোড পার হতে চান তবে আপনাকে দ্রুত হতে হবে।”

তবে সমালোচকরা সংশয়ে আছেন। “গর্ত এবং রাস্তার পাশের দোকানদারদের এড়িয়ে যাওয়া এক জিনিস, কিন্তু এটি কি ফুটবল দক্ষতায় রূপান্তরিত হবে?” প্রশ্ন তুললেন ক্রীড়া বিশ্লেষক, ফারিদ আহমেদ। “আমাদের অবশ্যই মৌলিক বিষয়গুলি হারানো যাবে না। শুধু এলিফ্যান্ট রোড সফলভাবে পাড়ি দিয়ে কোনও খেলোয়াড় কখনও বিশ্বকাপ জেতেনি।”

এদিকে, সাধারণ মানুষ নতুন পদ্ধতিকে উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। “আমাদের ফুটবল দলকে আমাদের জীবনের বাস্তবতা মেনে নিতে দেখা ভালো লাগছে,” শাহবাগের কাছে ট্রাফিকে আটকে থাকা এক পথচারী বললেন। “যদি তারা এটি মোকাবেলা করতে পারে, তবে তারা যে কোনও দলকেও মোকাবেলা করতে পারবে – এমনকি আর্জেন্টিনাকেও।”

বাফুফে সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়ের সাথে আরও বাধা যেমন হঠাৎ রাস্তার কাজ এবং এলোমেলো হরতালের মতো বিষয় যুক্ত করার আলোচনা করছে, যাতে খেলোয়াড়দের মানসিক এবং শারীরিক সক্ষমতা আরও উন্নত হয়।

শোনা যাচ্ছে, ফিফাও বাংলাদেশের এই নতুন প্রশিক্ষণ পদ্ধতির দিকে নজর রাখছে। যদি জাতীয় দলের পারফরম্যান্স উন্নত হয়, তবে ব্রাজিল এবং জার্মানির মতো বিশ্ব ফুটবলের বড় দলগুলোও তাদের নিজস্ব প্রশিক্ষণে ঢাকার ট্রাফিকের উপাদান অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

এখন সবার নজর পরবর্তী জাতীয় ম্যাচের দিকে। ঢাকার রাস্তায় অর্জিত নতুন দক্ষতা কি মাঠে বিজয়ে পরিণত হবে? নাকি তারা শুধুমাত্র ট্রাফিকের ধকলেই ক্লান্ত হয়ে পড়বে? সময় – এবং পরবর্তী জ্যাম –ই তা বলে দেবে।

বাফুফে প্রশিক্ষণ ট্রাফিক