যুক্তরাষ্ট্র ও চীন তাদের দীর্ঘদিনের তিক্ত বাণিজ্য যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। তবে এই ঐতিহাসিক চুক্তির কালি শুকানোর আগেই দুই পরাশক্তির মধ্যে শুরু হয়েছে নতুন এক যুদ্ধ—এবার তা ডিজিটাল ড্যান্স ফ্লোর টিকটকে। ট্যারিফ এবং প্রযুক্তি নিষেধাজ্ঞা ভুলে যান; এবার লড়াই হবে নাচের তাল, ভাইরাল ট্রেন্ড এবং বিশ্বের শীর্ষ টিকটক ইনফ্লুয়েন্সারের খেতাব দখলের।
বছরের পর বছর উত্তপ্ত আলোচনার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং একটি চুক্তিতে পৌঁছান যা বৈশ্বিক বাণিজ্যে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু শান্তির সেই মুহূর্ত দ্রুতই উবে যায় যখন শুরু হয় টিকটকের ট্রেন্ডিং পেজ দখলের লড়াই। ওয়াশিংটনে বিজয় ভোজের বদলে তা রূপ নেয় ড্যান্স অফে, যখন বাইডেন একটি টেন্ডিং চাইনিজ ড্যান্স মুভের টিকটক কম্পাইলেশন দেখে শিকে চ্যালেঞ্জ করেন।
“এটি শুধু নাচের লড়াই নয়; এটি আমাদের মূল্যবোধের জন্য লড়াই,” পাশে টিকটক তারকাদের নিয়ে হোয়াইট হাউজ থেকে বাইডেন ঘোষণা দেন। “এখানে শুধু সৃষ্টিশীলতা নয়, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, চীনের চেয়ে বেশি লাইক পাওয়ার প্রশ্ন।”
চীন দ্রুত জবাব দেয় একটি রাষ্ট্র অনুমোদিত দেশের শীর্ষ ইনফ্লুয়েন্সারদের দ্বারা কোরিওগ্রাফ করা টিকটক ড্যান্স ট্রেন্ড “রেড ড্রাগন শাফল” দিয়ে। ভিডিওটিতে ছিল চমকপ্রদ ড্রোন শট, সিনক্রোনাইজড ড্যান্সার এবং সিজিআই পান্ডার ক্যামিও। এটি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয় এবং ঘণ্টার মধ্যেই লক্ষ লক্ষ ভিউ অর্জন করে।
যুক্তরাষ্ট্রও পিছিয়ে ছিল না, তারা লঞ্চ করে “লিবার্টি লিপ,” একটি উচ্চ-শক্তির রুটিন, যেখানে জ্যাজ হ্যান্ডস, আতশবাজি এবং ঈগল মাসকটের উপস্থিতি ছিল। আমেরিকান টিকটক ইনফ্লুয়েন্সাররা প্ল্যাটফর্মে এক্টিভ হয়, তাদের ফলোয়ারদের “ফ্রিডম ড্যান্স”-এ যোগ দিতে উৎসাহিত করে। এমনকি হোয়াইট হাউজ ইঙ্গিত দিয়েছে যে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস একটি গোপন স্টুডিওতে শীর্ষ টিকটকারদের সাথে তার মুভস অনুশীলন করছেন।
…এটি অতিরিক্ত মাত্রায় সফট পাওয়ার। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, এবার তা ৩০ সেকেন্ডে সবচেয়ে ভালো বডি রোল করার প্রতিযোগিতা…
এদিকে ইন্টারনেট জুড়ে মিম, রিঅ্যাকশন ভিডিও এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ঝড় উঠেছে। কেউ কেউ দাবি করছে, উভয় পক্ষই ভিউ বাড়াতে বট ব্যবহার করছে, আবার কেউ কেউ মনে করছে, এটি মুদ্রাস্ফীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো আসল সমস্যাগুলো থেকে মনোযোগ সরানোর কৌশল হতে পারে।
সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, টিকটক যুদ্ধের ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে, কারণ প্রতিটি দেশ অপরকে টপকাতে একের পর এক কৌশল বের করবে। “আমরা এর আগে দেখেছি মহাকাশ দৌড়ে, অলিম্পিকসে, আর এখন টিকটকে,” মন্তব্য করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্লেষক ড. স্যামুয়েল হোয়াইট। “এটি অতিরিক্ত মাত্রায় সফট পাওয়ার। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, এবার তা ৩০ সেকেন্ডে সবচেয়ে ভালো বডি রোল করার প্রতিযোগিতা।”
বিশ্ব অবাক দৃষ্টিতে দেখছে যুদ্ধ চলাকালীন পরবর্তী ট্রেন্ড কীভাবে বের হয়। রাষ্ট্র-সমর্থিত টিকটক ড্যান্স টিমের উত্থান হতে পারে কী? আন্তর্জাতিক নৃত্য নিষেধাজ্ঞা আসছে কী? সময়ই তা বলে দেবে। আপাতত, একটি বিষয় নিশ্চিত: যুক্তরাষ্ট্র-চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন অফিশিয়ালি ভাইরাল হয়ে গেছে।
চীন টিকটক যুক্তরাষ্ট্র ইউএসএ