দেশের স্কুল ও কোচিং সেন্টারগুলোতে আলোড়ন তুলে বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে আগামী বছর থেকে পরীক্ষায় অনুমান করার দক্ষতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈধ দক্ষতা হিসেবে গণ্য করা হবে।
আজকের এক সংবাদ সম্মেলনে, শিক্ষামন্ত্রী ড. কাফি কবির এই সাহসী পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দেন। “বহু বছর ধরে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা মুখস্থবিদ্যা এবং সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দিয়েছে,” তিনি বলেন, “কিন্তু আমরা বুঝতে পেরেছি যে আধুনিক জগতে ছাত্রদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হলো আন্দাজ করে সঠিক উত্তর দেওয়া এবং ভাগ্যের ওপর ভরসা করা। তাছাড়া, আমরাও তো এমনই করে এখানে পৌঁছেছি, তাই না?”
‘অনুমানবিদ্যা’ হবে নতুন প্রধান বিষয়
গোপনে বহু বছর ধরে যে দক্ষতা চর্চা করে আসছে শিক্ষার্থীরা, এবার সেটিকে স্বীকৃতি দিতে সরকার নতুন বিষয় হিসেবে ‘অনুমানবিদ্যা’ পাঠ্যক্রমে যোগ করেছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অনুমানের কৌশল শেখানো হবে, যেমন “সবচেয়ে বড় অপশন ভরাট করা কৌশল,” “বিভ্রান্ত হলে ‘গ’ ভরাট করো,” এবং জনপ্রিয় “চোখ বন্ধ করে যা মনে আসে তাই লিখো পদ্ধতি।”
…পেঁয়াজের দাম আন্দাজ করা, বা জুম মিটিংয়ের সময় ইন্টারনেট চলবে কি না, এসব বাস্তবিকই অনুমানযোগ্য বিষয়…
সরকার উচ্চ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আরও উন্নত অনুমান কৌশল শেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার মধ্যে থাকবে “বুঝে অনুমান”, যেখানে শিক্ষার্থীদের অন্তত একটি ভুল উত্তর বাদ দিয়ে চোখ বন্ধ করতে শেখানো হবে, এবং “বিপরীত মনোবিজ্ঞান অনুমান,” যেখানে সবচেয়ে ভুল মনে হওয়া উত্তরটাই ভরাট করা হবে।
পরীক্ষা সংস্কারের নতুন যুগ
এই সংস্কারের আওতায় পরীক্ষার ৫০% নম্বর অনুমানের ওপর নির্ভর করবে, এবং শিক্ষার্থীরা যদি নির্ভুল অনুমান করতে সক্ষম হয় তবে অতিরিক্ত নম্বর পাবে। যারা কিছুটা ভাসা ভাসা হলেও যুক্তিযুক্ত উত্তর দিতে পারবে তারাও বিশেষ নম্বর পাবে। শিক্ষকদেরও নতুন করে প্রশিক্ষিত করা হবে এই নতুন পদ্ধতিতে উত্তর মূল্যায়নের জন্য।
“আমরা মনে করি এটি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চাপ কমাবে এবং বাস্তব জীবনের জন্যও প্রস্তুত করবে,” বলেন ড. কবির। “যেমন ভবিষ্যতে পেঁয়াজের দাম আন্দাজ করা, বা জুম মিটিংয়ের সময় ইন্টারনেট চলবে কি না, এসব বাস্তবিকই অনুমানযোগ্য বিষয়।”
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া
শিক্ষাক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কিছু শিক্ষাবিদ, যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম সাবের এই পদক্ষেপকে সাহসী ও উদ্ভাবনী হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন। “এটি দারুণ একটি স্বীকৃতি, আমরা তো সবসময়ই বিশ্বাস করতাম যে ক্রিটিকাল থিংকিং ওভাররেটেড। ভাগ্যই আসল সমতাসূচক। ভবিষ্যৎ তাদের, যারা অনুমান করতে পারে।”
তবে, সবাই খুশি নয়। কিছু শিক্ষার্থী ন্যায্যতার প্রশ্ন তুলেছে, বিশেষত যারা অনুমান করতে পারায় দুর্বল। মিরপুরের এক শিক্ষার্থী অনিক(১৬) বলেন, “এটা ঠিক না। আমি বহু বছর ধরে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের ভুল উত্তর বাদ দেওয়ার কৌশল শিখছি, আর এখন আমাকে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে যারা যেকোনো উত্তর ইচ্ছামতো ভরাট করে দেবে।”
কোচিং সেন্টারের দ্রুত অভিযোজন
বাংলাদেশের তুমুল জনপ্রিয় কোচিং সেন্টারগুলোও এই নিয়মের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিচ্ছে। বেশ কয়েকটি প্রধান প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই “অনুমান দক্ষতা” শাখা চালু করেছে, যেখানে ছাত্রদেরকে আত্মবিশ্বাস ও নির্ভুলতার সাথে অনুমান করার কৌশল শেখানো হবে। এক কোচিং সেন্টারের পরিচালক গর্বের সাথে বিজ্ঞাপন দেন, যেখানে বলা হয় তারা একটি বিশেষ পদ্ধতি শেখাচ্ছে, যাকে বলা হচ্ছে “৫০-৫০ লাইফলাইন কৌশল”।
“আমরা এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিশেষ ক্র্যাশ কোর্স অফার করছি, যা অনুমানের সঠিকতার হার ৩৪.৯৯% পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে,” “অনুমানে A+ অর্জন” লেখা লিফলেট দিতে দিতে বলেন কোচিং সেন্টারের পরিচালক।
এদিকে দেশের শিক্ষার্থীরা অনুমান করার দক্ষতা অনুশীলনে মনোনিবেশ করেছে। কিছুটা ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে আগামী প্রজন্ম আত্মবিশ্বাসী অনুমানকারী হবে যারা একটি পেন্সিল আর প্রার্থনা নিয়ে আধুনিক জীবনের জটিলতাগুলো পার করবে।
এক উত্তেজিত অভিভাবক বলেন, “অবশেষে আমার সন্তানের ডালে কতটা লবণ দিতে হবে সেই অনুমানের প্রতিভা একাডেমিকভাবে কাজে লাগবে!”
শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক