ঢাকার ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে সরকার একটি নতুন উদ্ভাবনী সমাধান ঘোষণা করেছে: আগামী মাস থেকে প্রতিটি বাসিন্দাকে সর্বদা একটি গাছ বহন করতে হবে। এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে “সবুজ ঢাকা”। পরিবেশবিদরা এই পদক্ষেপের প্রশংসা করলেও, নাগরিকরা এ বিষয়ে সংশয়ে আছেন।

এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ঘোষণা করেন, “এটি আমাদের দূষণ সমস্যার একটি যুগান্তকারী সমাধান। যদি ঢাকার ২ কোটি বাসিন্দা একটি করে গাছ বহন করেন, তাহলে আমরা শহরের অক্সিজেন উৎপাদনকে ২ কোটি শতাংশ বৃদ্ধি করতে পারব। অঙ্কটা সহজ। অঙ্কটা আপনারাই করে নিন।”

সরকার আশ্বাস দিয়েছে যে, শহরের বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে গাছ বিতরণ করা হবে যেখানে ছোট ক্যাকটাসের টব থেকে শুরু করে বড় আম গাছ পর্যন্ত থাকবে। “আমরা বৈচিত্র্য দিতে চাই,” গাছ বিতরণ কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা ব্যাখ্যা করেন। “সবাই রিকশায় বটগাছ বহন করতে পারবে না, তাই আমরা বিকল্প দিচ্ছি।”

গাছের ব্যাকপ্যাকে নতুন যুগ?

তবে নাগরিকরা এই আদেশের বাস্তবতা নিয়ে বিভ্রান্ত। গুলিস্তান, মিরপুর এবং মতিঝিলের মতো জনাকীর্ণ এলাকায় গাছ বহনের সমস্যাটি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

“একটি গাছ কোলে নিয়ে মোটরসাইকেল চালাবো কিভাবে?” এক মোটর সাইকেল আরোহী হারুন(৩৯) বিরক্তি প্রকাশ করেন। অন্যরা জানতে চান, এই নিয়ম ফুটপাথে কিভাবে কার্যকর হবে যেখানে ইতোমধ্যেই হকার, পার্ক করা গাড়ি, এবং খানা-খন্দে ভরা।

…এখন আমি প্রকৃতি এবং ডিজেলের মিষ্টি গন্ধ একসাথে উপভোগ করতে পারব…

এরই মধ্যে একটি স্টার্টআপ এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে “গাছের ব্যাকপ্যাক” চালু করেছে – এমন একটি ফ্যাশনেবল উপায় যাতে পিঠে গাছ বহন করা যায় এবং হাতে জিনিস বহনের ঝামেলা থাকে না। স্টার্টআপের সিইও রুম্মান খালিদ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তার মাটির বিছানা যুক্ত ব্যাকপ্যাকের প্রোটোটাইপ দেখিয়ে বলেন, “আমরা কেবল একটি সবুজ ঢাকার জন্য আমাদের অংশটুকু করার চেষ্টা করছি।”

জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া: “প্রথমে গর্ত, পরে গাছ”

সবাই এই উদ্যোগ নিয়ে উত্তেজিত নয়। নতুন নিয়মটি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মিম এবং রসিকতায় ভরে যায়। ফেসবুকে একটি ভাইরাল পোস্টে লেখা ছিল, “বাসের ধোঁয়া শ্বাস নেওয়ার সাথে সাথে একটি গাছ নিয়ে হাঁটা – এখন আমি প্রকৃতি এবং ডিজেলের মিষ্টি গন্ধ একসাথে উপভোগ করতে পারব!”

অনেকেই আরও জরুরি সমস্যা তুলে ধরছেন। “গাছ ছাড়, প্রথমে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক কর, যাতে বৃষ্টি হলে সাঁতার না কাটতে হয়,” ক্ষুব্ধ এক ঢাকাবাসীর মন্তব্য।

যদিও সরকার জোর দিয়ে বলেছে যে “সবুজ ঢাকা” প্রকল্পটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি, তবে বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে বিভক্ত। তবুও সরকার আশাবাদী। তাদের বিশ্বাস যথেষ্ট জনসম্পৃক্ততা এবং প্রতিটি কোণে গাছ নিয়ে ঢাকাকে শীঘ্রই একটি “শহুরে বন”-এ রূপান্তরিত করা যাবে। এক কর্মকর্তা বললেন, “যদি কিছু না হয়, অন্তত শহরটা দেখতে সুন্দর লাগবে।”

এদিকে, নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যেন তারা আগেই গাছ কেনা শুরু করেন যাতে গাছ বিতরণ কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইনের মুখোমুখি না হতে হয়।

পরিবেশ বায়ুদূষণ উদ্ভাবন প্রকল্প